জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
দৃষ্টিনন্দন, আকর্ষণীয় ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত মডেল মসজিদ নির্মাণের পাঁচ বছর পার হলেও সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলায় ১৩টি মডেল মসজিদের মধ্যে মাত্র ২টি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১টি মসজিদের কাজ এখনও চলমান।
অথচ, এই প্রকল্পের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল মাত্র ১৯ মাস। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কাজের গতি খুবই ধীর। অধিকাংশ সময় কাজ বন্ধ থাকে। আর যখন কাজ হয়, তখন মাত্র ৪-৫ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করায় অগ্রগতি হয়নি বললেই চলে। ফলে সময়মতো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে রয়েছে বড় অনিশ্চয়তা। সাদেক আলীসহ এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতিই এ দীর্ঘসূত্রতার মূল কারণ।
তারা বলেন, ঠিকাদাররা প্রতি বছরই আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। তদারকির অভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই আজ এই পরিস্থিতি। তাহিরপুর উপজেলা সদরে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রতিনিধি মহসিন আহমেদ জানান, ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পটি শুরু হয়। নির্ধারিত সময় ছিল ১৮ মাস। তবে জায়গা নির্ধারণ, পুরাতন মসজিদ ভাঙা, পুকুর ভরাট, করোনা মহামারি, বন্যা এবং অর্থসংকটের কারণে প্রকৃতপক্ষে কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশা করছি।
তবে এলাকাবাসী বলছেন, এই গতিতে কাজ করলে আগামী ১০ বছরেও প্রকল্প শেষ হবে না।
জামায়াতে ইসলামী তাহিরপুর শাখার আমির রুকন উদ্দিন বলেন, সময়সীমা অনেক আগেই শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনও কাজ চলছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুনামগঞ্জ উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন জানান, নির্ধারিত সময়ে মডেল মসজিদের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুত শেষ করার দাবি জানাই।
জেলা গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলায় ১২টি ও জেলা সদরে ১টি মসজিদসহ মোট ১৩টি মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটির ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা করে, মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২০১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রত্যেকটি মসজিদে থাকবে ইসলামিক ট্রেনিং সেন্টার, অটিজম সেন্টার, পুরুষ-মহিলাদের জন্য পৃথক ওজুখানা ও নামাজের জায়গা, কনফারেন্স ও গেস্ট রুম, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, বিদেশী পর্যটকদের জন্য আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, লাইব্রেরি, গবেষণা ও দাওয়াহ কার্যক্রম, হিফজুল কোরআন, হজ প্রশিক্ষণ, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসন এবং ফুলের বাগানসহ আরও নানা আধুনিক সুবিধা।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরা জানান, জেলায় ১২টি উপজেলায় ১২টি ও জেলা শহরে ১টি মোট ১৩টি মসজিদ নির্মাণে ২ শত ১ কোটি ৫০লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয়। সুনামগঞ্জ সদর ও জগন্নাথপুর উপজেলা মডেল মসজিদ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঠিকাদাররা কাজ দ্রুত না করায় বাতিল করে নতুন করে দায়িত্ব দেয়াসহ নানান কারণেই মডেল মসজিদ নির্মাণে দেরী হয়েছে। তবে এই পর্যন্ত কোনটিতে ৫০, কোনটিতে ৬০ পার্সেন্ট কাজ হয়েছে। সে হিসাবে ৬৫ পার্সেন্ট কাজ হয়েছে। আগামী অর্থ বছরেই কাজ শেষ হবে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই মসজিদগুলো দ্রুত নির্মাণ সম্পন্ন হলে ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
৫ বছরেও শেষ হয়নি ১১ মডেল মসজিদ নির্মাণ
- আপলোড সময় : ২২-০৫-২০২৫ ০৯:১৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৫-২০২৫ ১০:২৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ